ঢাকা,সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

ডা. সালামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দুদক ও সিভিল সার্জনকে আদালতের নির্দেশ

D.-Salam-23-2-161_1বার্তা পরিবেশক :
কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত  চিকিৎসক ডা. আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে অনিয়ম-জালিয়াতির অপরাধ প্রতীয়মান হওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশনকে আইনগত এবং কক্সবাজারের সিভিল সার্জনকে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গত ৮ ফেব্রুয়ারী কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট তৌহিদুল ইসলামের আদালত এ আদেশ দেন। একই সাথে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করে তা আদালতকে অবহিত করারও আদেশ দেন সংশ্লিষ্টদের। আদালতের আদেশের অনুলিপি পাঠানো হয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশন সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, কক্সবাজারের সিভিল সার্জন, দুদক চট্রগ্রাম-২ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ও কক্সবাজার সদর মডেল থানার অফিসার ইনর্চাজকে (ওসি)।
আদালত সূত্র জানায়, রাশেদুল করিম নামের এক ব্যক্তি গেল বছর ২০১৫ সালের ২১ মে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় একটি মামলা (জি আর-৫০৭, তাং-২১/৫/২০১৫) দায়ের করেন। ওই মামলার সাথে ঘটনার তারিখ ১৪/৫/২০১৫ উল্লেখ করে ভিকটিমের একটি জখমী সনদও দাখিল করা হয়। কিন্তু মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওই বছরের ২৮ জুলাই ফৌজদারী কার্যবিধির ১৭৩ ধারা মোতাবেক চূড়ান্ত রিপোর্ট মিথ্যা বলে আদালতে দাখিল করেন। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমার তদন্তকালে প্রাপ্ত তথ্য ও সাক্ষ্য প্রমাণে জানা যায় যে, বাদী ও বিবাদীগণ পূর্ব পরিচিত এবং পাশাপাশি লোক। বাদীর দায়েরকৃত মামলায় অভিযোগের ঘটনাস্থলে ঘটনার দিন গত ১৪/৫/১৫ ইং তারিখে বিকাল অনুমান ২.৫০ টার সময় উল্লেখিত কোন ঘটনায় সেখানে ঘটেনি মর্মে জানা যায়। বাদী রাশেদুল করিম আসামীর বিরুদ্ধে উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে আইনগত হয়রাণী ও আর্থিক ক্ষতি করার নিমিত্তে একটি সাজানো মিথ্যা ঘটনা উল্লেখপূর্বক অত্র মামলা দায়ের করেন। আমার সার্বিক তদন্তকালে প্রাপ্ত তথ্যে আসামীদের বিরুদ্ধে বাদীর আনীত অভিযোগের দ:বি: ১৪৩, ৩২৩, ৩২৪, ৩২৬, ৩০৭, ৩৭৯ ধারার অপরাধ প্রাথমিকভাবে মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে।’ এমনকি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে আসামীদের অব্যাহতি এবং মিথ্যা মামলা দায়ের করায় সংবাদদাতার (বাদী) বিরুদ্ধে ২১১ ধারায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করার অনুমতি প্রার্থনা করেন। আদালতে দাখিলকৃত জখমী সনদে ৬টি গুরুতর জখম ও ৩টি সাধারণ জখমের উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও তদন্তকারী কর্মকর্তা কেন চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করলেন তা জানতে তদন্তকারী কর্মকর্তার কেইস ডকেট বিশদভাবে পর্যালোচনা করে আদালত। কেইস ডকেট পর্যালোচনায় দেখা যায়, কেইস ডকেটের কেইস ডায়রী নং ০৯, তারিখ ২২/৭/১৫ ইংরেজী এ উল্লেখ করেন, সাড়ে ১০ টায় সদর হাসপাতালে পৌঁছে রেজিস্টার পর্যালোচনা করলাম। রেজিস্টার বইয়ে জরুরী বিভাগের রেজি: নং- ই ১৫৬/১১ তারিখ ১৪/৫/১৫ ইং মূলে ভিকটিম রাশেদুল করিম নামক কোন ব্যক্তি ঐ দিন হাসপাতালে ভর্তি হননি এবং কোন জখমী ডাক্তারী এম.সি এর রিপোর্ট প্রদান করেননি মর্মে জানা যায়। বিষয়টি ডায়রী নোট করা হইল।’ তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক গৃহীত সাক্ষীদের জবানবন্দী পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রত্যেক সাক্ষী ঘটনার তারিখ ও সময়ে কোন ঘটনা ঘটেনি মর্মে উল্লেখ করেন। বরং গত ২৫/৫/১৫ ইংরেজী তারিখ খোদ বাদী ও ভিকটিম আদালতে একটি বিশেষ দরখাস্ত দাখিল করে বলেন, তাকে তার বাবা শাসন করার জন্য মারধর করেন। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডা. আব্দুস সালাম হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন উল্লেখ করে একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেন। আর ওই সাদা কাগজে এজাহার সাজিয়ে ডা. আব্দুস সালামের সাথে জমি সংক্রান্ত বিরোধ থাকা লোকজনকে আসামী করে মামলা দায়ের করে। একই সাথে একটি মিথ্যা জখমী সনদও প্রদান করে। আদালতের জবানবন্দীতেও ভিকটিম একই ধরনের বক্তব্য প্রদান করেন। এমনকি আদালত ভিকটিমকে পরীক্ষা করেও তার দেহে কোন আঘাতের চিহ্ন দেখেননি।
এ অবস্থায় আদালত ডা. আব্দুস সালাম ও সংবাদদাতা রাশেদুল করিম পরস্পর যোগসাজসে মিথ্যা মেডিক্যাল সার্টিফিকেট সৃজন এবং তা আদালতে ব্যবহার করে আসামীদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে আদালতের মাধ্যমে আসামীদের শাস্তি প্রদানের চেষ্টা করে গুরুতর অপরাধ সংঘটন করেছে মর্মে আদালতের নিকট প্রতীয়মান হওয়ায় দন্ড বিধির ৪২০, ১৯৭, ১৯৮, ১৬৭, ৪৪৬, ৪৬৯, ৪৭১, ৫১১ সহ প্রিভেনশন অব করাপসন এ্যাক্ট এর ৫(২) ধারার অপরাধ মর্মে দুর্নীতি দমন কমিশন, চট্রগ্রাম-২ কে আইনগত এবং ডা. আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য কক্সবাজারের সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দেন আদালত। একই সাথে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করে আদালতে অবহিত করারও নির্দেশ দেয়া হয় সংশ্লিষ্টদের। আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজারের সিভিল সার্জন কমর উদ্দিন বলেন, আদালতের নির্দেশনা মেনে কাজ করা হবে। তার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
এদিকে ডা. আব্দুস সালাম বিভিন্ন মানুষের নামে জি আর ১৭৪/১৪ (দ্রুত বিচার), জি আর ৬৩৮/১৫, জি আর ২০১/১৫ সহ বিভিন্ন হয়রানীমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। এসব মামলা দায়েরে তিনি নিজের স্ত্রী ও বিভিন্ন লোকজনকে ব্যবহার করেন। শুধু মিথ্যা হয়রানীমূলক মামলা দায়ের, মিথ্যা জখমী সনদ প্রদান, বিভিন্ন লোকজনের জমি দখল ছাড়াও সরকারী জমি দখল করে তিনি কক্সবাজারে এক ভয়ংকর ভূমিদস্যুতে পরিণত হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে উখিয়ায় ২৬/১৩ নং বন মামলা, কক্সবাজারে ৩৯/১৩ ও ৪৫/১৩ নং বন মামলা, কক্সবাজার সদর মডেল থানায় জি আর ৩৬০/১৩ নং পরিবেশ অধিদপ্তরের মামলা, উখিয়া থানায় ২২/১১ নং ফৌজদারী মামলা, কক্সবাজার সদর মডেল থানায় জি আর ১২৪/১৪ নং মামলাসহ অসংখ্য মামলা রয়েছে।

পাঠকের মতামত: